বগুড়ার মেয়ে সামিরা সামছাদ। বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে হিসাববিজ্ঞানে স্নাতক সমাপনী পরীক্ষা দিয়ে অপেক্ষা করছেন ফলাফলের জন্য।
এরমধ্যে বেসরকারি একটা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছিলেন তিনি। কিন্তু বিশ্বে যখন করোনার ভয়াল থাবা; তখন চাকরিতে ইস্তফা দেন।
এরপর অবসরে ৭৫ টাকা দিয়ে আম কিনে বাড়িতে থাকা তেল-মসলা দিয়ে আচার বানান। সেই ছবি ফেসবুকে প্রকাশ করলে অনেকেই আগ্রহ নিয়ে দাম জানতে চান। আর তখনই সামিরা ভাবলেন, তিনি তো করোনার এ সময়ে ঘরে বসে আচার নিয়ে কাজ করতে পারেন।
সেই ভাবনা থেকেই উদ্যোক্তা হন সামিরা। ২০২০ সালের জুন মাসে আচার নিয়ে কাজ শুরু করেন। এ পর্যন্ত প্রায় ৮ লাখ টাকার আচার বিক্রি করেছেন তিনি। ফেসবুকের বন্ধুরা তাকে ‘আচার বুড়ি’ নামে ডাকেন। তিনি বলেন, ‘আমার বানানো আচারের ছবি ফেসবুকে দিলে অনেকেই দাম জানতে চান। তাই ভাবলাম, আমি আচার নিয়ে কাজ করতে পারি। করোনার সময়ে ঘরে বসে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে আচার দিতে পারি। তাই প্রথমে ফেসবুকে ‘ছায়াবৃক্ষ’ নামে একটি পেজ খুলি। এরপর বিভিন্ন গ্রুপে অ্যাড হই। এরমধ্যে বড় গ্রুপ ছিল ‘উই’। সেখান থেকে বেশি অর্ডার আসে।’
সামিরা প্রথমে আচারের অর্ডার নেন। তারপর আচার বানিয়ে ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেন। আচার বানানোর কাজে মা তাকে সাহায্য করেন। প্রথমে ডেলিভেরি বা কাচা-বাজার করার কাজ একা করতেন। এখন আরও চার জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। দুজন সহযোগী ও দুজন ডেলিভেরি ম্যান এ কাজে সহায়তা করে।
সামিরার কাছে প্রায় ২৪ রকমের আচার ও আমসত্ত্ব পাওয়া যায়। এরমধ্যে কাশ্মীরী আচার, গ্রিন ম্যাংগো স্লাইস আচার, গরুর মাংসের আচার, মুরগির মাংসের আচার, আলুবোখারা চাটনি, তেঁতুলের আচার, বরইয়ের আচার, জলপাইয়ের আচার, মরিচের আচার, চালতার আচার, আম-পেঁয়াজির আচার, আমড়ার আচার, আমলকির আচার, রসুনের আচার, রসুন-কালোজিরার মোরব্বা, রসঝুরি আমসত্ত্বের আচার প্রভৃতি।
ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী সামিরা বিভিন্ন রকমের আচার বানান। বর্তমানে সামিরার আচার কুরিয়ারের মাধ্যমে সারাদেশে পাওয়া যায়। তবে তিনি বগুড়ার ভেতর হোম ডেলিভেরি দিয়ে থাকেন। এ পর্যন্ত ৭টি দেশে সামিরার হাতে বানানো আচার পৌঁছেছে। খুব সহজে কার্গো বিমানের মাধমে বিদেশে আচার পাঠানো যায় বলে কষ্ট হয় না সামিরার।
সামিরা বলেন, ‘আচার নিয়ে কাজ শুরু করায় প্রতিবেশীদের অনেক কটু কথা শুনতে হয়েছে। অনেকেই বলেন, বাবা-মা বিবিএ পড়িয়েছেন কি আচার বিক্রির জন্য। কত অবনতি হলো মেয়েটার। এরকম অসংখ্য কটু কথা শুনতে হয়েছে। আমি মুখ বুজে সব শুনেও নিজের কাজ করে গেছি। সফল হওয়ার পর তারাই এখন আচারের কাস্টমার। তারাই এসে বলেন, নিজে কিছু করতে চাই, বুদ্ধি দাও। এটাই আমার সবচেয়ে বড় পাওয়া।’
সামিরা আরও বলেন, ‘জীবনে কী হতে চেয়েছি বা কী হয়েছি? এ নিয়ে কখনো মাথা ঘামাইনি। জীবনে সব সময় চেয়েছি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে। নারীরা যে কিছু পারি, তা প্রমাণ করতে চেয়েছি। একজন নারীকে স্বাবলম্বী হতে হবে, এটাই ছিল মূলকথা। অবহেলিত হওয়া যাবে না। কোনো অংশে নিজেকে ছোট ভাবা যাবে না। কিছুদিন আগপর্যন্ত আমি পরিবার থেকে হাতখরচের টাকা নিয়েছি। এখন পরিবারকে নিজের আয় থেকে সাহায্য করতে পারি। এটিই আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের।’
সামিরার মতো অনেক নারী আজ স্বাবলম্বী। পুরুষের পাশাপাশি নারীও অর্থ দিয়ে সাহায্য করছেন। সামিরার ইচ্ছা, তার ‘ছায়াবৃক্ষ’ একদিন একটি ব্র্যান্ড হবে। আচারের পাশাপাশি আরও অনেক খাবার তৈরি করবেন। সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে তার ছায়াবৃক্ষের কথা। সেই লক্ষ্যে কাজ করার জন্য সামিরা সরকারিভাবে খাবার তৈরি ও গুণগত মান ঠিক রাখার জন্য প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। তথ্যসূত্রঃ জাগো নিউজ