সেদিন যা ঘটেছিল প্রভার মেকআপ রুমে

ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী সাদিয়া জাহান প্রভা। মডেলিংয়ের মাধ্যমে তার মিডিয়া জগতে আগমন ঘটে। টেলিভিশন বিজ্ঞাপনে মডেল হিসেবে কাজ করার পর তিনি কয়েকটি খণ্ড নাটকে অভিনয় করে খুব অল্প সময়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। কিন্তু বিয়ে এবং বিচ্ছেদের কারণে কিছু সময়ের জন্য তার অভিনয় ও কর্মজীবন বাধাপ্রাপ্ত হয়।
এরপরে আবারো ফিরে আসেন অভিনয়ে। তবে তেমন সাড়া ফেলতে পারেন না। তিনি যাই করেন না কেনো অতীত যেন তার পিছু ছাড়ে না। সংবাদমাধ্যমে তার খবর মানেই অতীতের কথা তুলে আনা। শনিবার (১ এপ্রিল) সন্ধ্যায় অভিনয়শিল্পী সংঘের ইফতার পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে আলাদাভাবে কথা বলেন প্রভা। সেসময় তিনি এসব ঘটনাকে কৌশলে সাংবাদিকতার অদক্ষতা হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

শুরুতে প্রভা তার সাংবাদিক ভীতির কথা উল্লেখ করেন। মূলত এ কারণে অনেক কিছু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করতে পারেন না বলেও জানিয়েছেন। পাশাপাশি খবর হওয়ার ভয়ে যা পোস্ট করেন তা-ও ডিলিট করে দেন।

তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে গিয়ে তিনি বলেন, দেখেন দুইটা গল্প বলি। একটা মেকআপ রুম। যেখানে আমরা শুটিং করে রুমে ঢুকি মেকআপ করি, এসি খাই। আপনারা আসলে বসে গল্প করি। তো এভাবে একদিন গ্রিনরুমে বসে আছি। একজন ফটোগ্রাফার ও একজন সাংবাদিক আসলো। বসতে বললাম। এরপর আমি মুখে পাউডার মেখে মেকআপের প্রস্তুতি নিচ্ছি। এরমধ্যে ক্লিক… ক্লিক… ক্লিক। আমি বললাম, ‘কেন ছবি তুলতেছেন?’ বলে, ‘আমি তো জার্নালিস্ট’। এটার মানে কী বলেন তো? উনি সাংবাদিক বলে আমার কোনো প্রাইভেসি নাই?’

সেদিন যেই সাংবাদিক প্রভার মেকআপ রুমে ছিলেন তার নাম কুদরত উল্লাহ। তিনিই পুরো ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেছেন দেশীয় গণমাধ্যমে। সেই প্রতিবেদন থেকে পুরো ঘটনাটি তুলে ধরা হলো-

সাল ২০১৭, তখন আমি সাংবাদিক হিসেবে কর্মরত ছিলাম জনপ্রিয় নিউজ পোর্টাল ‘প্রিয় ডটকমে’। আমাদের নিয়মিত সাপ্তাহিক মিটিংয়ে আইডিয়া শেয়ার করে পরবর্তী সপ্তাহে তা লিখতে হতো। আমার আইডিয়া ছিল ‘মেকআপ রুমে আনমনে তারকা’। আইডিয়া পাস হয়। এরপর উত্তরার বেশ কয়েকটি শুটিং হাউজে গিয়ে ছবি পাই। এরমধ্যে সাদিয়া জাহান প্রভাও ছিলেন। যেহেতু আইডিয়াটা আমার এবং এই ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী আমি ছাড়াও আরো একজন আছেন। তিনি হলেন তখনকার সময়ে আমার সঙ্গে যাওয়া ফটোগ্রাফার রিয়াজ আহমেদ। নামটি বলে দিলাম কারণ এখন সময় বলার। আমি জানতাম একদিন এই ঘটনা সামনে আসবে। ফিরেও আসলো সেই দিন। সেদিন আমি এবং আমার ফটোগ্রাফার মেকআপ রুমে প্রবেশ করি। দেখি প্রভা বসে আছেন। কথা হলো আমাদের। সবকিছুই ঠিক ছিল, কিন্তু ওই যে আমার আইডিয়া। ওই আইডিয়ার মূল কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে ছবিটা তোলা হবে মেকআপ রুমে, তবে তারকা যেন বুঝতে না পারে। কিন্তু বুঝেও গেলেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি শুধু এতোটুকুই বললেন বাকিটুকু বললেন না! ছবি তোলার সময় আমি বসে ছিলাম এবং আগেই বলে দিয়েছিলাম ফটোগ্রাফারকে যেন ভিন্ন কোনো কিছু মিনিং করে এমনভাবে ছবি তোলার দরকার নেই। শুধু দরকার তারকা মেকআপ নিচ্ছেন, তা আয়নায় দেখা যাচ্ছে কিন্তু যার ছবি তোলা হবে সে যেন দেখতে না পারে। ছবি তোলার পর আমরা তাকে দেখিয়েই নেব। ফটোগ্রাফারও সেভাবেই ছবিটি তুলেছিলেন, কিন্তু প্রভা বুঝে গেলেন। এতে যে তিনি রেগে গেলেন সেটা আমি বুঝলাম। ফটোগ্রাফারকে প্রশ্ন করার পর প্রভা বুঝতে পারল সে আমার সঙ্গের। কিন্তু মেকআপ রুমে তিনি আমাকে কিছু না বলে হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলেন রুমের বাইরে। সেখানে তিনি আমার হাত ধরেই কথা বলছেন। আমরা তুমি করেই বলে থাকি একে অন্যকে।

প্রভার ভাষ্য ছিল এ রকম, এই ফটোগ্রাফার কি তোমার সঙ্গে? আমি বললাম হ্যাঁ,। আগে বলবা না, কেন ছবি তুলল এভাবে? বুঝতে পারলাম প্রচুর রেগে যাচ্ছে। আমি বললাম কোনো টেনশন নেই। এটা আমারই একটা আইডিয়া। তাকে আইডিয়ার গল্পটা শোনানোর পরে ম্যানেজও করলাম। তিনি প্রকাশ করতে রাজিও হলেন। হাসি দিয়েই বললেন, এ কারণেই তোমার সঙ্গে সব অভিনেত্রীরাই বন্ধুত্ব করে। আমিও মুচকি হাসি দিলাম। ঘটনা শেষ। আমার আইডিয়া সার্থক। কিন্তু পরে বিষয়টি নিয়ে আমি আর কোনো ফিচারই লিখিনি। কারণ, ছবিটা ঘোলা আসছিল। আর এ নিয়ে অন্য কোনো লেখাও প্রকাশ করা হয়নি।

এখন আমার প্রশ্ন প্রভার কাছে, হঠাৎ করে এমন কি ঘটে গেল যে এটা তার এখনো মনে রয়ে গেছে? নাকি এর পেছনে আরো অন্য কোনো গল্প আছে? সাংবাদিকদের এভাবে হেয় করেই কেন কথা বললেন এতো বছর পর? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর অনেকেই বুঝতে পারছেন। তবে অনেকটা মেঘলা আকাশের মতোই। কারণ, আকাশে মেঘ জমলে বৃষ্টি না-ও আসতে পারে। সে যাইহোক, বর্তমানে ফিরে আসি। বেশ কয়েকবার বিবেকে বাধা দিলেও অবশেষে এই লেখায় পরিষ্কার করে দিলাম। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সাংবাদিকতার ধরনও অনেক বদলে গেছে। আজ যে খোলামেলা পোশাক পরে তারকারা খুব সহজেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে আপলোড করে দেন, অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলো যখন প্রথম দিকে আসে তখন আপনাদেরকে বোঝানো যায়নি। তখন এইসব আইডিয়াকে ছিঃ ছিঃ আমি এইভাবে ছবি তুলব বলেও কটাক্ষ করা হয়েছিল। কাউকেই রাজি করানো যায়নি। এমন আরো অনেক গল্পই আছে। চাইলে প্রকাশ করা যায়। কিন্তু আমি সেদিকে যাচ্ছি না। সেলিব্রিটিদের কোনো প্রাইভেসি নেই সাংবাদিকদের কাছে। কারণ, আপনার ভালো কর্মটা প্রকাশ করার যদি রাইট থাকে তাহলে খারাপটারও রাইট থাকে। যদি তা প্রকাশযোগ্য হয়। কারণ এ দুটো মিলেই সাংবাদিকতা।