ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা পরীমনির শৈশব ও কৈশোর কেটেছে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ায়। তার বাবা মনিরুল ইসলামের বাড়ি নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার সালাবাদ ইউনিয়নের বাকা গ্রামে।
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার ভগীরথপুর পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত ছিলেন মনিরুল। সেখানে থাকা অবস্থায় তিনি বিয়ে করেন ভান্ডারিয়া উপজেলার সিংহখালী গ্রামের সালমা সুলতানাকে।
তিন বছর বয়সে মা-বাবা দুজনকেই হারান পরীমনি। এরপর নানাবাড়িতেই বেড়ে ওঠেন তিনি। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাজীবন কেটেছে সেখানেই।
২৪ মার্চ পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার ইকড়ি ইউনিয়নের সিংহখালী গ্রামে নানা বাড়িতে যান পরীমনি। আগে অনেকবার গেলেও এবারের যাত্রাটা তাঁর জন্য, গ্রামের মানুষের জন্য ছিল অন্য রকম। এবারের ভ্রমণে প্রথমবার পরীর সঙ্গী স্বামী শরীফুল রাজ ও সন্তান রাজ্য। গ্রামে ফিরে যেন নিজের দুরন্ত শৈশব-কৈশোরের দিনগুলোতে ফিরে গেছেন পরী; হয়ে উঠেছেন কিশোরীবেলার শামসুন নাহার স্মৃতি।
জানা যায়, এসএসসি পরীক্ষার পরপরই গ্রাম ছাড়েন পরীমনি। অভিনয়ে আসার পরও প্রতিবছর কিছুদিনের জন্য গ্রামে ফিরেছেন। গ্রামের রাস্তাঘাট, ঘাস, লতা ও ফুলের সঙ্গে শৈশব-কৈশোরের কত স্মৃতি! গ্রামে ফিরে গায়ে প্রকৃতির গন্ধ মেখে সতেজ হয়ে ঢাকায় ফিরেছেন। কিন্তু গত চার বছর গ্রামে যেতে পারেননি।
হাসতে হাসতে পরীমনি বলেন, ‘আগে দুইবার খবর পাঠিয়েও যেতে পারিনি। বড় ব্যাপার ছিল, কোভিড। তা ছাড়া নিজের জীবনে কিছু ঝড়ঝাপটা গেছে। বিয়ে, বাচ্চা হওয়ারও একটা ব্যাপার ছিল। এবার তাই না বলেই রওনা হয়েছিলাম।’
পরী না বললে কী হবে, হেলিকপ্টারের শব্দ শুনে সবাই বুঝে গিয়েছিল তিনি আসছেন। কারণ, আগেও তাঁর হেলিকপ্টার করে কয়েকবার গ্রামে যাওয়া হয়েছে। এই পথে আর কেই-বা হেলিকপ্টারে আসবেন! ফলে গ্রামের আকাশ সীমানায় হেলিকপ্টার দেখেই দূরদূরান্ত থেকে পরিচিত, অপরিচিত লোকজন ছুটে আসেন।
পরী বললেন, ‘সঙ্গে রাজ ও রাজ্য ছিল, এ কারণে মানুষের একটা বাড়তি আগ্রহ ছিল। যখন নামলাম, সবাই ঘিরে ধরেছে। যে মাঠে নেমেছিলাম, ছোটবেলায় জায়গাটা ছিল জলাশয়। এখন মাটি ভরাট করে মাঠ হয়েছে। নামার পর মানুষের ভিড়ে এগোতেই পারছিলাম না। মানুষের এত ভালোবাসা, বাড়ি পৌঁছানোর পর দল বেঁধে দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আমাকে ও আমার সন্তানকে দেখতে আসছেন।’
গ্রামে গেলে স্কুলজীবনের বন্ধুদের মনে পড়ে। তবে তাঁর বড় খালার মেয়ে স্বর্ণা ছাড়া ক্লাসের অন্য বন্ধুদের সঙ্গে আর দেখা হয় না। কেউ বিদেশে, কেউ চাকরি নিয়ে ব্যস্ত। কেউ বিয়ে করে গ্রাম ছেড়েছেন। তাঁদের কথা বলতে বলতে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন পরী।
প্রায় দুই সপ্তাহ হলো গ্রামে আছেন পরীমনি। কেমন কাটছে গ্রামের দিন? পরীমনি বলেন, ‘আমাকে, রাজ্যকে দেখার জন্য কত মানুষ আসছেন! দোয়া করছেন, ভালোবাসা দিচ্ছেন, আমাদের সঙ্গে ছবি তুলছেন; খুব উপভোগ করছি।’
কয়েক দিন আগে তাঁর স্কুলের কয়েকজন শিক্ষক স্ত্রীদের নিয়ে এসেছিলেন, জানালেন পরীমনি, ‘তাঁরা আমাকে নিয়ে স্কুলজীবনের স্মৃতিচারণা করলেন। কত কথা, যেন শেষই হচ্ছিল না। স্যাররা আমাকে সেই স্কুলজীবনের শামসুর নাহার স্মৃতি নামেই এখনো ভালোবাসেন, আমার আজকের অবস্থান নিয়ে গর্ব করেন।’
যে স্কুলে পড়েছেন, স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে সেই ভগীরথপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন পরীমনি। ঘুরে ঘুরে স্কুলজীবনের গল্প শুনিয়েছেন রাজকে, বলেন পরীমণি।