ভাইভা বোর্ডে অপমানিত হয়েছিলেন, আজ তিনি প্রথম সরকারি চাকরি পরীক্ষায়

একসময় চলতে হতো কুঁজো হয়ে। দীর্ঘদিন স্বাভাবিকভাবে ঘুমাতে পারেননি। শারীরিক অসুস্থতার জন্য অপমান হতে হয়েছে চাকরির ভাইবা বোর্ডে। ‘আপনি চাকরির যোগ্য নন’ এমন কথাও শুনতে হয়েছে তাকে।

সেই দাউদ নবী সম্প্রতি বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) হিসাব সহকারী পদে সারাদেশে প্রথম হয়েছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে অনেক চড়াই-উৎরাই পার করে আজ সফল তিনি।

ছোটবেলা থেকে ডানপিটে দাউদ নবী ভুগেছেন বিভিন্ন অসুস্থতায়। এসএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছিলেন। হাসপাতালের বেডে শুয়েই দিয়েছেন এইচএসসি পরীক্ষা। জিপিএ ৩.৬০ পান সেইবার।

এদিকে শরীরের অসুস্থতা বাড়তে থাকে। নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ধরা পড়ে তিনি আঙ্কাই লজিং স্পন্ডোলাইটিসে ভুগছে। ভুল ট্রিটমেন্টের কারণে মেরুদণ্ডের প্রতিটি জয়েন্টের মাঝখানের লালাজাতীয় পদার্থ শুকিয়ে গেছে। ফলে ডিস্কগুলো একটি আরেকটির সঙ্গে জোড়া লেগে যেতে থাকে। এরই মধ্যে ২০১১ সালে এইচএসসিতে মানোন্নয়ন পরীক্ষা দিয়ে ৪.৪০ পান তিনি।

একই বছর ভর্তি পরীক্ষায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সি’ ইউনিটে মেধাতালিকায় ১২৪তম এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৩তম হন। পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিন্যান্সে ভর্তি হন। ২০১৩ সাল আবারও অসুস্থ হন। এবার ধীরে ধীরে কুঁজো হয়ে যান। এভাবেই ২০১৮ সালে সিজিপিএ ৪-এর মধ্যে ৩.৭০ পেয়ে বিবিএ এবং ২০১৯ সালে ৩.৫২ পেয়ে এমবিএ শেষ করেন তিনি।

দাউদ নবী জানান, তার বাবা ছিলেন মাটি কাটা শ্রমিক। আমার পাঁচ বছর বয়সেই এক প্রকার বিনা চিকিৎসায় মারা গেলেন তিনি। ভাইয়েরা সবাই দিনমজুর। বড় আপার স্বামী মারা গেছেন। আপার তিন সন্তান ও মাকে নিয়ে আমার পরিবার। চলে আমার স্কলারশিপের টাকায়।

তিনি বলেন, স্নাতক শেষে চাকরির লড়াইয়ে প্রথম পরীক্ষা ছিল বেসরকারি কম্পানিতে। লিখিত পরীক্ষায় প্রথম ১০ জনের মধ্যে আমার অবস্থান। খুব খুশি হয়েছিলাম এই ভেবে যে জীবনে প্রথম চাকরির পরীক্ষায় সফল হতে যাচ্ছি, কিন্তু বিধিবাম।

ভাইভা বোর্ডে প্রবেশ করলে আমাকে দেখে বোর্ডের চেয়ারম্যান বললেন, ‘তুমি তো অসুস্থ। এখানে কাজ করতে পারবে না। আসলে তুমি কোনো চাকরিরই উপযুক্ত নও। তোমাকে আবেদন করতে কে বলেছে?’ এই বলে কোনো কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই বের করে দিলেন! চোখের জল মুছতে মুছতে ভাইভা বোর্ড থেকে বের হলাম।

এরপর থেকে আরো বেশ কয়েকটি ব্যাংক ও নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিয়েছি। সবগুলোতেই মেধাতালিকায় প্রথম দিকে ছিলাম। অনেক আশায় বুক বাঁধি। কিন্তু পরে ই-মেইলে জানতে পারি, আমি বাদ!

লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় ভালো করার পরও চাকরি না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়লেও হাল ছাড়েননি। এরই মধ্যে বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা, গ্যাস কম্পানিসহ বেশ কয়েকটি সরকারি চাকরির ভাইভা দেন। সর্বশেষ বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের হিসাব সহকারী পদে সারা দেশে মেধাতালিকায় প্রথম হয়েছেন তিনি।