নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের বড় ছেলে। প্রথম বর্ষ থেকেই সংসারের হাল ধরেছেন। নিজের পড়াশোনার খরচ, ছোট ভাই-বোনের পড়াশোনার খরচ, আর সংসারের খরচ জুগিয়ে পড়াশোনা টা চালিয়ে যাওয়া সহজ ছিল না একেবারেই৷
আবাসিক ছাত্র ছিলেন সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের (পরবর্তীতে বিজয় একাত্তর হলের)। আশেপাশের বন্ধুরা যখন বিকেলে বল নিয়ে মাঠে যেত, টিউশনের প্রয়াজনে তাকে ছুটে যেতে হয়েছে কখনো বা ক্যাম্পাস টু উত্তরা, কখনো বা খিঁলগাও, কখনো ধানমন্ডি। এ তো গেল প্রথম বর্ষের কথা
অনার্স-মাস্টার্স পুরো বছর জুড়েই করিয়েছেন ৫-৬ টি টিউশন৷ পুরো সপ্তাহের ৭ দিনই টিউশন করেছেন। কখনো দৈনিক ৫টি টিউশন ও করতে হয়েছে থাকে । এত টিউশন করেও বিভাগীয় ক্লাসের সাথে আপোষ করেন নি কখনো।
প্রতি সেমিস্টারে ক্লাসে ছিলেন শতভাগ উপস্থিত। একাডেমিক রেজাল্টে ছিলেন অনার্সে ৪র্থ, মাস্টার্সে ৫ম। অপূর্ণ রাখেন নি নিজের কোন শখও। টিউশনের টাকায় কেনেন ল্যাপটপ, ডিএসএলআর ক্যামেরা, দামি ফোন, ঘুরে বেড়িয়েছেন দেশের প্রায় সবক’টি জেলায়। বলছিলাম জীবন যুদ্ধে হার না মানা, শতভাগ পরিশ্রমী এক তরুণের স্বপ্ন জয়ের গল্প৷ নাম ইমাম উদ্দিন মাহমুদ৷
জীবনের প্রথম বিসিএসেই (৩৮ তম বিসিএস) শিক্ষা ক্যাডারে ১ম স্থান অধিকার করে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলায়৷ পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগে। ইমাম সংসারের হাল, নিজ বিভাগে ভালো ফলাফল আর নিজের সব’কটি শখ পূরণের ফাঁকেও যে স্বপ্নটি তাড়িয়ে বেড়িয়েছে প্রতিক্ষণ তার নাম বিসিএস। পাবলিক বাসে চড়ে টিউশনে যেতেন। হাতে থাকতো কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স অথবা বিসিএস প্রস্তুতির অন্য কোন গাইড৷
প্রতিদিন ৪-৫ টি টিউশনের ধকল সামলে রাত ১১ টায় হলে এসে যখন বিছানায় নিজেকে এলিয়ে দেয়ার সময়, ঠিক তখন বসতেন পড়ার টেবিলে। প্রয়োজনীয় কাজ বাদে এক নাগাড়ে পড়তেন রাত ২-৩ টা পর্যন্ত৷ সকাল আটটা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত ক্লাস করে আবার বেড়িয়ে পড়তেন টিউশনের উদ্দেশ্যে। ভাগ্যের কাছে অসংখ্যবার ব্যর্থ হয়েছেন। কিন্তু মাহমুদ থেমে থাকেননি। কঠোর পরিশ্রম আর অধ্যবসায় যে ভাগ্যকে বদলে দিতে পারে তার নজির রেখেছেন ইমাম উদ্দিন মাহমুদ।
শত ব্যস্ততা আর ক্লান্তির মাঝেও বই পড়তে দেখে বন্ধুরা কখনো ঠাট্টা করতেন, কখনো অবাক হতেন। এত কিছু সামলে বিভাগীয় ফলাফলে ভালো করাতেও অনেকে হিংসা করতো। কিন্তু অধ্যবসায়ী ছেলেটিকে পরাস্ত করতে পারেনি কোন শক্তি৷ দুচোখে যার বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন ভর করে আছে তাকে আটকাবে সাধ্য কার। তাইতো জীবনের প্রথম বিসিএসেই সফলতার সুখ ধরা দিল তার কাছে।
লেখক: মোঃ আব্দুল্লাহ খান, নন-ক্যাডার (৩৮তম বিসিএস) সমাজকল্যাণ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।