যশোরের মনিরামপুরে ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) ও গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা) প্রকল্পের সভাপতিদের না জানিয়ে ৫১ প্রকল্পের শেষ কিস্তির ৬৮ লাখ ৯৪ হাজার টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে। সোনালী ব্যাংক মনিরামপুর শাখার ব্যবস্থাপক শামছুদ্দিন আহমেদের সহযোগিতায় নিজ দপ্তরের নাজির শাহিন হোসেনকে দিয়ে মঙ্গলবার বিকালে ইউএনও এই টাকা উত্তোলন করেছেন বলে জানা গেছে।
প্রকল্পের সভাপতিদের স্বাক্ষর ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার সত্যায়িত স্বাক্ষর বাদে টিআর ও কাবিটার ৫১টি প্রকল্পের বিল ইউএনও উত্তোলনের খবর বুধবার সকাল থেকে মনিরামপুরে চাউর হয়েছে। টাকা উত্তোলনের বিষয়টি ইউএনও নিজে সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করে বলেছেন, এটা মিসটেক হয়েছে।
ইউএনওর টাকা উত্তোলন নিয়ে কথা হয়েছে খেদাপাড়া ইউপির চেয়ারম্যান আব্দুল আলিম জিন্নাহ, ভোজগাতী ইউপির চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক, মনিরামপুর সদর ইউপির চেয়ারম্যান নিস্তার ফারুক, রোহিতা ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান মেহেদী হাসানের সঙ্গে। তারা বলছেন, শুনেছি ইউএনও অফিস টাকা তুলে নিয়েছে। আমাদের এই বিষয়ে সেখান থেকে কিছু জানানো হয়নি।
এ বিষয়ে মনিরামপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ বায়েজিদ বলেন, আমি দুই দিন ধরে ঢাকায় আছি। শুনেছি, প্রকল্পের সভাপতিদের স্বাক্ষর বাদে টিআর ও কাবিটার ৫১টি প্রকল্পের শেষ কিস্তির টাকা উঠানো হয়েছে। এই ৫১টির বিলে আমার সত্যায়িত স্বাক্ষর নেই। এর বেশি কিছু জানাতে চাননি পিআইও।
উপজেলা হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, মঙ্গলবার বিল ছাড়ার শেষ দিন ছিল। সোমবার আমাকে জানানো হয়েছিল এবার বিল ইউএনও অফিসকে দিতে হবে। পিআইও দপ্তরের কেউ না আসায় ইউএনও দপ্তরের নাজির শাহিন এসে বিল বুঝে নিয়ে গেছেন। এ বিষয়ে নাজির শাহিন হোসেন বলেন, আমি টাকা তুলিনি। এখন ইউএনও স্যারের সামনে আছি। এই বলে তিনি সংযোগ কেটে দেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন বলেন, পিআইও ঢাকায় থাকায় আমি শাহিনকে বলেছিলাম বিল এনে আমাদের দপ্তরে রাখতে। সে বুঝতে না পেরে টাকা তুলে এনেছে। এটা প্রসিডিয়াল মিসটেক হয়েছে। ইউএনও বলেন, ৬৮ লাখ ৯৪ হাজার ২৬৭ টাকা তোলা হয়েছিল। আমরা আটটি প্রকল্পের সভাপতিকে ১৪ লাখ ৩১ হাজার ৪৯৮ টাকা দিয়েছি। বাকি ৫৪ লাখ ৬২ হাজার ৭৬৯ টাকা বিকালে চালান রশিদের মাধ্যমে ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়েছে।
সোনালী ব্যাংক মনিরামপুর শাখার ব্যবস্থাপক শামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, হিসাবরক্ষক দপ্তরের স্বাক্ষর থাকলে আমরা টাকা দিয়ে দেব। প্রকল্পের সভাপতির স্বাক্ষর ব্যাংকে দরকার হয় না। একপর্যায় শামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, ৫৪ লাখ ৬২ হাজার ৭৬৯ টাকা ব্যাংকের কোষাগারে জমা হয়ে গেছে।
সোনালী ব্যাংক যশোর করপোরেট শাখার (দক্ষিণ) ডিজিএম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মনিরামপুর শাখার ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে কোনো অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।