ফুচকা বিক্রি করে জোগাতেন পড়ালেখার খরচ, পেলেন গোল্ডেন ‘এ’ প্লাস

দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার তাহিবুল ইসলাম। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তৃতীয়। ফুচকা দোকানি বাবার অভাবের সংসারে বেড়ে ওঠেন তাহিবুল।

পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই স্কুল শেষে সময় দিতেন বাবার ফুচকার দোকানে। মাধ্যমিকের গণ্ডিতে সকালে লেখাপড়া আর বিকেলে ব্যস্ত শহরে রাস্তার পাশে করতেন ফুচকার দোকানদারি।

বয়স বেড়ে যাওয়ায় তার বাবা ফুচকার দোকানে সময় দিতে না পারায় ছোট্ট তাহিবুলই হাল ধরেন সংসারের। পরিবার ও লেখাপড়ার খরচ মেটাতে নিজেই শুরু করেন ফুচকা বিক্রি।কিন্তু পড়ালেখা করে যেতে হবে অনেক দূর সে কথা মোটেও ভোলেননি তিনি।মাধ্যমিক শেষ করে ভর্তি হন উচ্চমাধ্যমিকে।জীবনের সব বাধাবিপত্তিকে পেছনে ফেলে চালিয়ে যান পড়াশোনাও।

এর মধ্যে বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে প্রকাশিত হয় এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল। এতে আলিম পরীক্ষায় গোল্ডেন ‘এ’ প্লাস পেয়ে উত্তীর্ণ হয় তাহিবুল।
তার বাড়ি দিনাজপুরের বিরামপুর পৌরশহরের পূর্বপাড়ায়। বাবা বাদল হোসেন আর মা আনিসা বেগম। সে এবার বিরামপুর চাঁদপুর ফাজিল মাদরাসা থেকে ২০২২ সালের আলিম পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে গোল্ডেন ‘এ’ প্লাস পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। বিকেলের ব্যস্ত শহরে ফুচকা খেতে আসা সকলের মুখেই এখন তাহিবুলের প্রশংসা।

বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকা মোড়ে ফুচকা ও চটপটি বিক্রি করতে দেখা গেছে তাকে।

তার গোল্ডেন ‘এ’ প্লাস পাওয়ার খবরে সেখানে উৎসুক জনতা ও ফুচকা খেতে আসা মানুষ তাকে একনজর দেখতে ভিড় জমায়। এমন খুশির দিনে জিপিএ-৫ শিক্ষার্থীদের মতো আনন্দ আর হৈ-হুল্লোড় করা কথা থাকলেও সেখানে তাহিবুল তার পরিবারের মুখে দুমুঠো খাবার জোগাতে বিকেল থেকে ফুচকা বিক্রি করছেন।

কাজের ফাঁকেই কথা হলো তাহিবুলের সাথে। তিনি জানায়, পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে বাবার ফুচকার দোকানে এসে বাবাকে সহযোগিতা করতাম। সকালে মাদ্রাসায় যেতাম আর বিকেলে দোকানে ফুচকা আর চটপটি বিক্রি করতাম। রাতে লেখাপড়া শেষে বাবা-মায়ের সাথে ফুচকা আর চটপটির উপকরণ প্রস্তুত করতাম। এভাবেই পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছি। দাখিল পরীক্ষায় জিপিএ ৪ দশমিক ৭৮ পেয়েছি। সেদিন ‘এ’ প্লাস না পেয়ে মনটা খারাপ হয়েছিল। পরে আমার শিক্ষকরা আমাকে বুঝিয়েছেন সাহস দিয়েছেন। অবশেষে আলিমে ভর্তি হই। সকালে মাদ্রাসায় ক্লাস করি আর বিকেল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত রাস্তার পাশে ফুটপাতে ফুচকা বিক্রি করি।

এবার আলিম পরীক্ষায় গোল্ডেন ‘এ’ প্লাস পেয়েছি। স্বপ্ন দেখি দেশের বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ব। বাবা-মার কষ্ট দূর করব।
তাহিবুলের বিষয়ে বিরামপুর চাঁদপুর ফাজিল মাদরাসার বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক এ এস এম আশরাফুল আলম বলেন, তাহিবুলের পরিবারে অভাব-অনটন আছে এটা সত্য। কিন্তু পরিবারের অভাব তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। বড় হবার স্বপ্নে সে রাস্তায় ফুচকা ও চটপটি বিক্রি করতে গিয়ে নিজের মানসম্মান নিয়ে কখনো ইতস্তত বোধ করেনি। লেখাপড়ায় সে অত্যন্ত মনোযোগী ও আন্তরিক। সে নিয়মিত ক্লাস করত। তার হাতের লেখা খুবই সুন্দর এবং গোছালো। আমার বিশ্বাস, তাহিবুল দেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার সুযোগ পাবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পরিমল কুমার সরকার বলেন, একজন ফুচকা বিক্রেতা গোল্ডেন ‘এ’ প্লাস পেয়েছে এটি বিরামপুরবাসীর জন্য গর্ব। সেইসাথে দেশের দরিদ্র পরিবারে বেড়ে উঠা হাজারো শিক্ষার্থীর জন্য তাহিবুল এখন অনুপ্রেরণা। সে একজন অদম্য মেধাবী। তাহিদুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় বা মেডিকেল কলেজে ভর্তির ব্যাপারে কোনো সহযোগিতা চাইলে বিরামপুর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে সহযোগিতা করা হবে।