শাবানা-জসিমকে নিয়ে অনেক অজানা কথা জানালেন ঝন্টু

ঢালিউডের যে জুটিরা আজও দর্শকের হৃদয় দখল করে আছেন তাদের মধ্যে শাবানা-জসিম অন্যতম। তাদের রসায়ন দাগ কেটে আছে মানুষের মনে।

তবে নন্দিত নায়িকা শাবানার বিপরীতে অভিনয়ের সুযোগ পাওয়াটা জসিমের কাছে ছিল সোনার হরিণ পাওয়ার মতো। এ সুযোগ পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে লাক্স সাবান দিয়ে গোসল করেছিলেন তিনি। তথ্যটি দিয়েছেন চলচ্চিত্র নির্মাতা দেলোয়ার জাহান ঝন্টু।

চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে জসিমের যাত্রাটা শুরু হয়েছিল ঝন্টুর মাধ্যমে। এর আগে তিনি কাজ করতেন অতিরিক্ত শিল্পী হিসেবে। পারিশ্রমিক পেতেন দশ টাকা করে।

এ সময় শাবানার সঙ্গে কাজের সুযোগ পেয়ে জসিম আনন্দে আত্মহারা হয়েছিলেন উল্লেখ করে এ পরিচালক বলেন, ‘একবার জসিমের বাসায় বসে আছি। জসিম বললেন, ঝন্টু ভাই আমি এক্সট্রা শিল্পী হিসেবে অভিনয় করছি। আমাকে একজন বড় পরিচালক বলেছেন, কালকে বিকেলে আপনার শুটিং আছে চলে আইসো (আসবেন) এফডিসিতে। আমি জানতে চাইলাম আমার শট কি?

তিনি জানালেন, সিনেমার নায়িকা শাবানাকে তোমার কাঁধে তুলে বসের (মূল খলনায়ক) সামনে রাখতে হবে। এটাই তোমার শট। এত বড় নায়িকাকে কাঁধে তুলব! এটা আমার জন্য বিরাট বিষয়। পরের দিন সকালে বাজারে গিয়ে তিনটি লাক্স সাবান কিনেছি। শেভ করে ভালো করে গোসল করেছি। দুপুরে আবার গোসল করেছি। যাতে করে আমার শরীর থেকে কোন গন্ধ-টন্ধ না বের হয়।’

গল্পটি শুনে দেলোয়ার জাহান ঝন্টু সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন অতিরিক্ত শিল্পী জসিমকে শাবানার নায়ক বানাবেন তিনি। নিজের এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য শাবানার কাছে মিথ্যাও বলেছিলেন তিনি। ঝন্টু বলেন, ‘এসব কথা শুনে বললাম, আপনাকে আমি একটা সারপ্রাইজ দেব। পরশু নতুন একটা সিনেমায় আপনাকে নিচ্ছি। আলমগীর, সুচরিতা, শাবানা এবং আপনি আছেন। চলে আসবেন। শুটিংয়ে আসলেন। ড্রেস পরে জসিম রেডি। শাবানা ম্যাডামকে বললাম, আপনার ডায়লগ— আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচব না। তুমি আমার প্রথম প্রেম। তিনি বললেন, এটা ব্যাপার না। আমি রেডি আছি আপনি আলমগীরকে ডাকেন।

এরপর জসিমকে সামনে দাঁড় করিয়ে বললাম, ম্যাডাম শট দেন। বলার সঙ্গে সঙ্গে শাবানা ম্যাডাম আমার দিকে তাকালেন। বিষয়টি বুঝতে পেরে শাবানা ম্যাডামকে একটু পাশে নিয়ে গিয়ে বললাম, ম্যাডাম আমি আলমগীরের সঙ্গে আপনাকে রাখিনি, জসিমের সঙ্গে রেখেছি। কিন্তু বিষয়টি আপনাকে বলিনি। এটা আমার ঠিক হয়নি। আপনি যদি বলেন, আমি সরি বলব। তখন শাবানা ম্যাডাম বললেন, না সরি বলার দরকার নেই চলেন! ’

শাবানার বিপরীতে জসিম অভিনীত ওই ছবিটির নাম ‘ওমর শরীফ’। এ ছবি দিয়েই ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরে যায় জসিমের। সেইসঙ্গে ঢালিউড পায় এক দুর্দান্ত অভিনেতা, যিনি দীর্ঘদিন রাজত্ব করে গেছেন পর্দায়।

ঢাকাই সিনেমার অন্যতম সফল ও কালজয়ী নায়ক জসিম। আশি ও নব্বই দশকে তিনি দাপটের সঙ্গে রূপালি পর্দা মাতিয়েছেন। একের পর এক ব্যবসাসফল সিনেমা দিয়ে নিজেকে সফল নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তাকে দেশের অ্যাকশন ঘরানার সিনেমার পথিকৃৎ বিবেচনা করা হয়।