২ মিনিটেই নারীদের মোবাইলের ব্যক্তিগত ছবি হাতিয়ে নেয় মিজান

অনন্যা আক্তার (ছদ্মনাম) (১৫) গাজীপুর মহানগরীর একটি বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীতে অধ্যয়ন করছেন। অনলাইনে পণ্য সরবরাহকারী একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ম্যাজিক বক্স কেনার জন্য অর্ডার করেন।

সে অনুযায়ী গত ৫ ফেব্রুয়ারি ডেলিভারিম্যান মিজানুর রহমান অনন্যার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে। সে অনন্যার ঠিকানা জানার জন্য একাধিকবার ফোন করে। অনন্যার দেওয়া লোকেশন অনুযায়ী মিজান তার বাসায় ম্যাজিক বক্স পৌঁছে দেয়ার জন্য হাজির হয়। অনন্যা ম্যাজিক বক্স হাতে পেয়ে খুব খুশি হয়।

ডেলিভারীর সময় ডেলিভারিম্যান মিজান অনন্যাকে জানায়, সে যদি গুগলে অনন্যার লোকেশন অ্যাড করে দেয়, তাহলে ভবিষ্যতে যে কোন অনলাইন পন্য সরবরাহকারী তার নিকট পণ্য সরবরাহকরার জন্য আর বারবার ফোন করে কেউ বিরক্ত করবে না। অ্যাড করা লোকেশন অনুযায়ী যে কোন অনলাইন পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন তার ঠিকানায় পৌঁছাতে পারবে।

অনন্যা সরল মনে মিজানের কথা বিশ্বাস করে তার মোবাইলটি মিজানের হাতে তুলে দেয়। মিজান ক্রেতার গুগল লোকেশনে এ্যাড্রেস অ্যাড করে দেওয়ার কথা বলে কৌশলে ক্রেতার মোবাইলটি হাতে নেয়। তারপর সে ক্রেতার মোবাইলের গুগুল ফটো অ্যাপে ঢুকে শেয়ারিং অপশনে গিয়ে শেয়ার উইথ পার্টনার হিসাবে মিজানের ব্যক্তিগত জিমেইল একাউন্ট এ্যাড করে মাত ১/২ মিনিটেরে মধ্যেই মোবাইলটি আবার অনন্যাকে ফেরত দেয়। কিন্তু অনন্যা বিষয়টি বুঝতে পারেননি।

কয়েকদিন পর ডেলিভারিম্যান মিজান ফোন করে অনন্যার ব্যক্তিগত গোপনীয় ও আপত্তিকর কিছু ছবি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে টাকা দাবী করে। টাকা না দিলে অনন্যা আক্তারের ছবি ভাইরাল করার হুমকি প্রদান করে।

এ ঘটনার পর অনন্যা লোকলজ্জার ভয়ে মানুষিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে এবং পড়ালেখা বন্ধ করে দিয়ে একাধিকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করে। এ নিয়ে অনন্যার পরিবারের সকল সদস্য গত এক সপ্তাহ যাবৎ দূর্বিষহ সময় পার করছিল।

জিএমপির সহকারী পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) আসাদুজ্জামান জানান, নিরুপায় অবস্থা থেকে বাঁচার আশায় অনন্যার পিতা ১০ ফেব্রুয়ারি গাজীপুর মহানগর পুলিশের সদর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নেয়। তারা পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অপরাধীর অবস্থান সনাক্ত করতে সক্ষম হয়।

পরে জিএমপির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) রেজওয়ান আহমেদের (পিপিএম) নেতৃত্বে সদর থানা পুলিশ অভিযানে নামে। তারা গাজীপুর মহানগরীর জয়দেবপুরের রথখোলা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে ডেলিভারীম্যান মিজানুর রহমানকে ঐদিন সোয়া ১১টার দিকে ঘটিকায় গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

গ্রেফতার মো: মিজানুর রহমান ওরফে আল-আমিন (২২) জামালপুর জেলার ইসলামপুর থানার চরগাঁওকোড়া গ্রামের মৃত আজিম উদ্দিনের ছেলে। সে গাজীপুর মহানগরীর সদর থানাধীন রথখোলা এলাকায় জেলা পরিষদের বিপরীতে স্বপনের টিনশেড বাসার ভাড়াটিয়া।

জিএমপির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) রেজওয়ান আহমেদ জানান, গ্রেফতারের পর আসামীর ব্যবহৃত মোবাইলটি যাচাই-বাছাই করে অনন্যা আক্তারসহ অনেক নারীর আপত্তিকর, গোপন মুহুর্তের ছবিসহ বিভিন্ন ব্যক্তির ১১টি ইমেইল আইডি লগইন অবস্থায় পাওয়া যায়। যাদের আইডি লগইন অবস্থায় পাওয়া গেছে তাদের বিস্তারিত নাম ঠিকানা সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। তিনি আরো বলেন, মিজানসহ একটি চক্র অভিনব কায়দায় নারীর আপত্তিকর, গোপন মুহুর্তের ছবিসহ সংগ্রহ করে ব্ল্যাকমেইল করাসহ টাকা চাইত এবং টাকা না দিলেই নেটে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিত।

তিনি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে মিজান স্বীকার করে যে, অনলাইন শপে নারী ও উঠতি বয়সী মেয়েদের টার্গেট করে মুলত অনলাইনে পণ্য অর্ডার দেওয়ার পরে ডেলিভারীর সময় উক্ত ডেলিভারিম্যান ক্রেতার গুগল লোকেশনে এ্যাড্রেস এ্যাড করে দেওয়ার কথা বলে কৌশলে ক্রেতার মোবাইলটি হাতে নিত। তারপর ক্রেতার মোবাইলের গুগুল ফটোতে ঢুকে শেয়ারিং অপশনে গিয়ে শেয়ার উইথ পার্টনার হিসাবে ধৃত ডেলিভারি ম্যান তার ব্যক্তিগত জিমেইল একাউন্ট এ্যাড করে মোবাইলটি ক্রেতাকে ফেরত দিয়ে দিত। কাজটি সম্পন্ন করতে সময় নিত ১/২ মিনিট। পরবর্তীতে ডেলিভারি ম্যান তার সুবিধামত সময়ে মোবাইলের গুগল ফটোতে ঢুকে শেয়ারকৃত নারী ক্রেতার গুগলে থাকা সকল ছবি তার মোবাইলে ডাউনলোড করে নিয়ে নিত। এভাবেই ধৃত ডেলিভারীম্যান ভিকটিমকে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করছিল।

জিএমপি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিয়াউল ইসলাম জানান, ধৃত আসামীর অনন্যার পিতা বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা ও পর্নোগ্রাফী আইনে মামলা দায়ের করেন। শনিবার তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরো জানান, ঐ আসামীর বিরুদ্ধে জামালপুরে একটি হত্যা মামলা রয়েছে।