টোরের মেয়ে তাহসিন বারি সুহা। বয়স মাত্র ১৫ বছর। এরই মধ্যে অন্তর্জালের মাধ্যমে মাছ-ফলসহ দেশীয় বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করে লাখপতি বনে গেছে। সারা দিন ব্যবসা আর পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ততা। সামনে সুহার এসএসসি পরীক্ষা।
সুহার উদ্যোগের নাম ‘ফলের ঝুড়ি’। তার ব্যবসা ফেসবুক গ্রুপ ও পেজভিত্তিক। উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরামের (উই) ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে, নিজের গ্রুপ ‘সুহার ঝুড়ি’ ও পেজ ‘ফলের ঝুড়ি’র মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করে সুহা।
নাটোরের বাসিন্দা সুহা উই-এ যোগ দেয় গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি। প্রথম পোস্ট ২ এপ্রিল। এভাবে ব্যবসা শুরু। ১০ মাসে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে তার অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান।
সম্প্রতি এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা হয় উদ্যোক্তা তাহসিন বারি সুহার। বলে, ‘উদ্যোক্তা হতে পেরে খুব ভালো লাগছে। যখন থেকে বুঝতে শুরু করেছি, তখন থেকেই স্বপ্ন ছিল নিজে কিছু একটা করব। পরিবারের প্রায় সবাই ব্যবসায়ী হওয়ায় ব্যবসার প্রতি একটা আলাদা টান আছে ছোটবেলা থেকে। উই গ্রুপে এসে সেই আগ্রহটাই মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। আর উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে অনুপ্রেরণা বলেন আর সবচেয়ে বেশি সাপোর্ট বলেন, দুইটাই আমার আম্মু রত্না বানু। তিনি নিজে একজন সফল মাছ চাষি। তাঁর সফলতা দেখে আমার ইচ্ছেও তীব্র হতে থাকে। আমি যেহেতু নিজে থেকে কিছু করতে চাইতাম আর এটাতে তাঁর পূর্ণ সমর্থন থাকায় তিনি আমাকে উই গ্রুপে যুক্ত করেছিলেন। আমি যখন তাঁকে আমার পরিকল্পনার কথা বলি, তিনি সেটাতে সমর্থন করেন ও শুরু করার সাহস জোগান। এর পর থেকেই আমার উদ্যোক্তা-জীবনের পথচলা শুরু।’
সুহার উদ্যোগের নাম ফলের ঝুড়ি হওয়ায় প্রথমে শুধু মৌসুমি ফল দিয়ে শুরু করেছিল। তবে এখন মৌসুমি ফলের সঙ্গে বিভিন্ন প্রকারের মধু, কাঠের ঘানিতে ভাঙা সরিষার তেল, প্রায় সব সবজি ও মাছ, আখ ও খেজুরের গুড়, মসলাসহ বিভিন্ন গ্রামীণ পণ্য উদ্যোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছে। গত ১০ মাসে সুহার উদ্যোগে প্রায় ১৫ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে।
সুহার এই সাফল্যের পেছনে বড় ভূমিকা রয়েছে উই গ্রুপের। তার ভাষ্যে, ‘নাসিমা আক্তার নিশা আপু ও ও তাঁর টিমের নেতৃত্বে রাজিব আহমেদ স্যারের দিক-নির্দেশনায় উই এখন দেশের অন্যতম সেরা ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম। যদি ই-কমার্স এডুকেশনের কথা বলেন, তাহলে উই এবং ডিজিটাল স্কিল ফর বাংলাদেশের (ডিএসবি) বিকল্প আর নেই। উই-এর ফেসবুক গ্রুপে ছেলেমেয়ে সবাই থাকলেও মেয়েদের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ। তাই যেকোনো মেয়ে সহজেই তার উদ্যোগের কথা নির্দ্বিধায় তুলে ধরতে পারে। মেয়েদের জন্য নিরাপদ হওয়ায় অসংখ্য মেয়ে তাদের উদ্যোগ উই-এর মাধ্যমে শুরু করেছে।’
সুহা আরও বলে, ‘অনেকের মতো আমারও ধারণা ছিল ফেসবুক শুধু আড্ডা ও মজার জায়গা। উই গ্রুপে এসে আমার ভুল ভেঙেছে। ফেসবুকেও যে পড়ালেখা করা যায়, সেটা অনুধাবন হয়েছে উই-এ জয়েন করার পর। উই-এ জয়েন না করলে আমার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হয়তো আরও সময় লাগত। উই আমার স্বপ্নের পথটা সুগম করে দিয়েছে। অনলাইন তথা ফেসবুকের যথার্থ ব্যবহার শিখিয়েছে। যেটা হয়তো ভবিষ্যতে আমার জীবনের সিদ্ধান্ত নিতে প্রভাব ফেলবে। সত্যিই আমি উই-এর প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ। নাসিমা আক্তার নিশা আপু ও রাজিব আহমেদ স্যারের প্রতি অনেক ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা। তাঁদের পরিশ্রমের ফলেই আজ এত সুন্দর একটা প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠেছে।’
দুই মাস আগে উই থেকে জয়ী অ্যাওয়ার্ড (রাইজিং স্টার) পেয়েছে সুহা। তার ভাষায় উদ্যোক্তার আবশ্যকীয় গুণ, ‘একজন উদ্যোক্তাকে সফল হতে হলে অনেক গুণের অধিকারী হতে হয়। মোটামুটি অলরাউন্ডার টাইপের। কারণ, প্রতিনিয়ত সময়, পরিস্থিতি, পরিবেশ, সামাজিকতাসহ নানা দিকের বিষয়গুলোকে নিয়ে তার কাজ করতে হয়। সততা, দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের মানসিকতা, দায়িত্ব ও কর্তব্যের ব্যাপারে সিরিয়াস হওয়া, যেকোনো কঠিন পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার মানসিকতা, নতুনত্ব খোঁজার ঝোঁক—এসব বিষয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’
মাত্র ১৫ বছর বয়সে অনেক দক্ষতা অর্জন করেছে তাহসিন বারি সুহা। পড়াশোনার পাশাপাশি ইন্টারনেট সিকিউরিটি ও ইন্টারনেটে ব্রাউজিংয়ে ভালো দক্ষতা তার। তা ছাড়া পেইন্টিংয়ের কাজও অনেক ভালো লাগে তার। বোর্ডের ওপর পুরোনো পাটের বস্তা দিয়ে সেটার ওপর পেইন্টিংয়েও দক্ষ।
সুহার উদ্যোক্তা-জীবন ১০ মাস। এখনই তার নিয়মিত কর্মী চার জন। লাখপতি হয়েছে সুহা? তার উত্তর, ‘এরই মধ্যেই আমি এই কাতারে নাম লিখিয়েছি। আমার বিক্রি ১৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ অনেক আগেই আমি লাখপতি হয়ে গেছি।’
সুহার মতে, ব্যবসায় নেমে প্রথমেই অধিক লাভের আশা করা উচিত নয়। তবে লোকসান যেন না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর লোকসান হলে সেটার কারণ খুঁজে বের করে দ্রুত সমাধান করতে হবে। পণ্যের মান ভালো হলে ক্রেতা বাড়বেই।